ধূমকেতু প্রতিবেদক, আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী : উচ্চাভিলাসি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাত ধরে গজিয়ে উঠা কিশোর গ্যাংয়ের কিশোরদের বেপরোয়া অপরাধ কর্মকান্ডে নিরাপত্তাহীন নগরবাসি।দিনে রাতে বেপরোয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা।বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ডে শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ।চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি,এমন কি মানুষ খুন করতে দ্বিধাবেধ করছেনা তারা।
তাদের লাগাহীন অপরাধ কর্মকান্ডের প্রসারের সাথে নগর জীবন নিরাপত্তা অন্যতম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বেসামাল কিশোরেরা মহানগরীতে আবারো দৃশ্যমান। হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি ও মাদক গ্রহণ ছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। বিশেষত বাইকে চেপে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে তারা। পথচারী,স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানিও করছে। সম্প্রীতি নগরবাসীর মধ্যে এ নিয়ে এক প্রকার ভীতি ছড়িয়েছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার অফিস সূত্রে জানাগেছে,, উচ্ছৃঙ্খল কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রুখতে গত কয়েক বছর আগে মহানগরীতে ৬ শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করেছিল পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু পুলিশের নজরদারির অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের দাপটে এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠা বিভিন্ন কিশোর গ্যাং দমনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।ফলে তারা দ্বীগুন উৎসাহে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোল থেকে শুরুকরে সরকার পরিবর্তনের পর আবারো পুরোদমে সক্রিয় হয়ে ওঠছে এসব অপরাধী চক্র। বৃদ্ধি পেয়েছে সকল অপরাধ কর্মকান্ড। এর ফলে নগরবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক।

নগরবাসীর অভিযোগ, রাজশাহী মহানগরী, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আবারো দৃশ্যমান হচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই এসব কিশোর দল বেঁধে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সড়কে নেমে পড়ে। জনসংগম সড়কে রেসে লিপ্ত হচ্ছে। পথচারী নারীদের হয়রানি করছে। সুযোগ পেলেই দেশীয় অস্ত্র উঁচুয়ে ছিনতাইও করছে।

সম্প্রতি চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর শনিবার রাত ১০টায় নগরীর পঞ্চবটি এলাকায় প্রকাশ্যে মিম (২০) নামের এক যুবকে কুপিয়ে হত্যা,২১ সেপ্টেম্বর নগরীর ভুগরইলে সিরাজুল ইসলাম (৬৫) কে হত্যা,২২ সেপ্টেম্বর দমকুড়া থানার ল”পড়ায় সাজামুল ইসলাম হত্যা, ১৭ অক্টোবর
কাঁটখালী বাজারে আলম (৬৫) হত্যা,
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে তানোরে জিয়ারুল (৪০) হত্যা,৩০ আগস্ট সন্ধায় নগরীর কচুয়াতৈলে ডা,এরশাদ কে হত্য,একই রাত পৌনে ১২টায় বর্নালীতে ডা,কাজেমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় শংকিত নগর জীবন ও নগরবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।

নগরীর বালিয়াপুকুরের গৃহবধূ লায়লাবানু বলেন, ‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকলে বনলতা ট্রেন ধরে ঢাকয় যাবার জন্য রাজশাহী রিক্সাযোগে রাজশাহী স্টেশন যাবার পথে শিরোইল মোসজিদের কাছে ৪/৫ কিশের দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার গলার স্বর্নের চেইন ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয় নেয় ছিনতাই করিরা। পরে সমস্যা হতে পারে এমন শঙ্কায় থানায় কোনো অভিযোগও
করেননি এই গৃহবধূ।
কয়েকদিন আগে অন্তরা রায়দা নামের এক গৃহবধূ তার
ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছিনতাইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘আমার জীবনে এরচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা আর কোনোদিন সম্ভবত ঘটেনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বন্ধ গেট পার হয়ে সিটি বাইপাসের আগে আমার ব্যাগটা পাশে থেকে এক বাইকে যোগে ৩ জন এসে টান দেয়। আমি ব্যাগটা খুব শক্ত করে ধরেছিলাম। আর ব্যাগের হ্যান্ডেলটা শক্ত না হওয়ায় হ্যান্ডেলটা নিয়ে যায়। যদি হ্যান্ডেলটা শক্ত হতো তাহলে ব্যাগের সঙ্গে আমিও পড়ে যেতাম।’তিনি আরো লিখেছেন, ‘কয়েকদিন আগে নর্দান মোড় থেকে আমার এক বান্ধবীর ব্যাগও ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।’

এদিকে, গত কয়েকদিন আগে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা এলাকা থেকে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মতিহার থানা পুলিশ। সকল আসামিদের বয়স ২৪-২৬ বছরের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে এরা কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য।এছাড়া দামকুড়া থানায় সম্প্রতি ছিনতাইয়ের পর অটোরিকশা চালককে ফিল্মি কায়দায় হত্যা করা হয়েছে।
এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন ছিনতাই আতঙ্ক সকল নগরবাসীর মনে। তবে কিশোর গ্যাংয়ের উচ্ছৃঙ্খল তৎপরতা রোধ ও ছিনতাই নির্মুলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তার থেকে বলা হচ্ছে।

রাজশাহী মহা নগরীর ও মেট্রোপলিটন এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে সরকারী ০১৩২০-০৬১০৫৬ নং মোবাইলে কথা হয়।তিনি বলেন, নগর পুলিশের সকল স্ব,স্ব থানা কর্মকর্তাকে নিজ নিজ থানার আইনশৃঙ্খলা বজায়,ছিনতাই দমন,বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোরদের গতীবিধি নজর রাখা এবং মাদক নির্মূলে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছ।
তিনি আরে বলেন,সম্প্রতি কয়েকটি খূনের ঘটনায় আমরাও হতবিহব্বল।পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় এনেছ।এছাড়া চুরি, ছিনতাই রোধে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।নগরীতে অপরাধ নিরমূলে তিনি পুলিশের পাশাপাশি নগরবাসির সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেছন।

★সন্ত্রাস দমনে আরএমপির অফিসার ইনচার্জদের বক্তব্য:-
নগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের দিনে ও রাতে ৪টা করে টহল টিম কাজ করছে। আমার যোগদান প্রায় মাসখানেক হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ছিনতাইয়ের কোনো জিডি হয়েছে বলে মনে নেই। তারপরও কাগজপত্র দেখে বলা যাবে। আর কিশোর গ্যাংয়ের যে তালিকা ছিল তা চুরি হয়ে গেছে। আবারো নতুন করে কাজ করা হচ্ছে।

★মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা একেবারে যে নাই, এমনটা না। এরইমধ্যে ২টা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। আর আমাদের রাতে ৩টি এবং দিনে ৪টি টহল টিম কাজ করছে।

★চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ মতিউর রহমান বলেন, আমি গত মাসের ১৮ তারিখ জয়েন করেছি। এরমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি হয়নি। আর আমার রাতে ২টি এবং দিনে ২টি টহল টিম কাজ করছে। কিশোর গ্যাং নিয়েও কাজ শুরু করেছি। ধীরে ধীরে তৎপরতা বাড়বে।

★কাটাখালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের এখানে ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা নেই। আর দিনে ও রাতে টহল টিম কাজ করছে। এটার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী ডিউটি দেওয়া হয়। আর কিশোর গ্যাংয়ের কোনো তালিকা আমাদের নেই। আপনাদের কাছে থাকলে আমাদের দিতে পারেন।

★শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ
মাহবুব আলম বলেন, আমি গত মাসের ১৭ তারিখ যোগদান করেছি। এখন পর্যন্ত ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা পাইনি। আর আমার থানায় ৩টা করে রাত ও দিনে টহল টিম কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা থানায় নেই। তবে আমি এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

★এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ
শহিন আখতার বলেন, গত একমাসের মধ্যে আমার থানায় ১টা মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে কোনো ঘটনা নেই। আর কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা আরএমপিতে আমার হাত ধরেই তৈরি।বোয়ালিয়াতেই প্রায় ৩০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। অন্য থানাগুলো মিলিয়ে আরো ২০০-২৫০ জনের তালিকা ছিল। এয়ারপোর্ট থানায় সে তালিকাটা দেখে জানাতে পারব। তবে আমরা কাজ শুরু করছি।

★পবা থানার অফিসার ইনচার্জ
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার থানায় কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। তবে আমাদের উচ্চ পর্যায়ের যে নির্দেশনা আছে, সেটা অনুযায়ী কাজ করছি।

★কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ
কামাল হোসেন বলেন, আমি আসার পর কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা পাইনি। কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা সর্ম্পকেও জানা নেই। তবে আমরা কাজ করছি। আর রাতে-দিনে মিলিয়ে ৬টা টহল টিম কাজ করছে।

আরএমপির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বোয়ালিয়া। যেখানে সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো এই থানা এলাকাতেই বেশি। এ বিষয়ে জানতে বোয়ালিয়া থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে থানার তদন্ত কর্মকর্তা তাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এখানে যোগদান কয়েক দিন হলো। এরমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা পাইনি। আর কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়েও কাজ শুরু হচ্ছে।’

আরও নিউজ ও ভিডিও পেতে ক্লিক করুন :

ওয়েব সাইট : https://dhumkatunews.com/
ইউটিউব ভিডিও লিংক : https://www.youtube.com/@dhumkatunews/featured
টুইটার : https://twitter.com/dhumkatunews
ইন্সটেগ্রাম : https://www.instagram.com/dhumkatunews/
লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/dhumkatunews/
পিনটারেস্ট : https://www.pinterest.com/dhumkatunew