ধূমকেতু প্রতিবেদক, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রী রেহানা আক্তার (৩৪) নামের এক গৃহবধুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন এবং তাদের বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেবর যুবলীগ নেতা আহসান হাবিব মিলন (৩৫) এর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের সময় গৃহবধূকে কুপিয়ে যখম করে ওই যুবলীগ নেতা।
এ সময় ওই গৃহবধূকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার ছেলে মোজাহিদ হোসেন (১৪) ও মেয়ে জুবাইদাকেও মারধর করা হয়। গুরুতর আহত ওই গৃহবধূ হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই যুবলীগ নেতা মিলন উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় রোববার রাতে হাতীবান্ধা থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন গৃহবধূর স্বামী জিয়ারুল হক। এর আগে গত শনিবাব (২ জুলাই) সকালে উপজেলার বড়খাতা গ্রামের তহশিলদার পাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, ছোট ভাই যুবলীগ নেতা আহসান হাবীব মিলন (৩৫), বড় ভাই সফিয়ার রহমান পিন্টু (৫৫), মনিরুজ্জামান (৫১), রবিউল ইসলাম (২৮), খতিবর রহমান(৩০), মামুনসহ (৩৫) আরও অনেকে।
জানা গেছে, জমি নিয়ে আপন ভাই জিয়ারুলের সাথে তার বড় ভাই ভাই পিন্টু ও ছোট ভাই যুবলীগ নেতা মিলনের দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে গত শনিবার জিয়ারুল হকের বাড়িতে দুইভাই মিলন ও পিন্টুসহ আরও কয়েকজন হামলা চালায়। এসময় জিয়ারুল হকের স্ত্রী রেহেনা বাঁধা দিলে তাকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে বসত বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় যুবলীগ নেতা মিলন। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ছেলে ও মেয়েকেও মারধার করেন তারা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার বিকেলে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন রেহেনা আক্তার। তার মাথায় দুটি সেলাই ও দু হাতে ১১টি সেলাই দেওয়া। এ সময় রেহেনা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “দেবর মিলন বাড়িতে এসে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় আমি বাধা দিতে গেলে মিলনের হাতে থাকা চাকু দিয়ে আমার হাতে ও মাথায় কোপ দেয়। এমনকি আমার ভাসুর, দেবর ননদ ও ননদের ছেলে মিলে আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেধে নির্যাতন করে। আমাকে রক্ষা করতে আমার ছেলে মেয়ে ছুটে আসলে তাদেরকেও মারধর করে।”
গৃহবধূ রেহেনা আক্তারের স্বামী জিয়ারুল হক বলেন, আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে আমার বড় ভাই ও ছোট ভাই বোন মিলে আমার স্ত্রীকে মারধর করে। আমি আইনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে কথা বললে যুবলীগ নেতা আহসান হাবিব মিলন বলেন, তাকে কোন মারধর করা হয়নি। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। অভিযোগ অস্বীকার করে সফিয়ার রহমান পিন্টু বলেন, আমরা তাকে মারধর করিনি সে নিজে নিজে হাত কেটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাঈম হাসান নয়ন বলেন, ওই গৃহবধূ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি । ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।