ধূমকেতু প্রতিবেদক, বদলগাছী : প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে। এই গানটির সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পত্রিকা বিক্রেতা ফেরিওয়ালা বেলাল হোসেন এর জীবনের গল্প বেশ মিলে যায়।
প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় তার ছুটে চলা। জেলা শহর নওগাঁ হইতে খুব সকালে বিভিন্ন পত্রিকা নিয়ে এক সময় সাইকেল যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খবরের কাগজ বিক্রি হচ্ছিলো। সকালে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতো খবরের কাগজ। খবরের কাগজ পড়ুয়ারা সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চায়ের টেবিলে রাখা পত্রিকা হাতে নিয়ে এক নজর চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় পত্রিকার প্রধান প্রধান শিরোনাম গুলো।
নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের সরিজপুর গ্রামের আজিমুদ্দীন মন্ডলের ছেলে বেলাল হোসেন। পেশায় তিনি একজন পত্রিকা বিক্রেতা। পত্রিকা বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার। ১যুগ ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। বাবার তেমন জায়গা জমি না থাকায় এই পেশার উপার্জিত টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে সে। পত্রিকা বিক্রি করে পাল্টে গেছে তার সংসার জীবনের চিত্র। পত্রিকা বিক্রির টাকায় তার ভাগ্যবদল হয়েছে। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পত্রিকার পাতায় কত মানুষের জীবনের ঘটনা প্রকাশ হয়। আর সেই কাগজের পাতায় পাতায় কত খবরই ছাপা হয়! ছাপা থাকে না শুধু বেলাল এর গল্পটি। এক সময় বেলালের সংসারে খুব কষ্ট ছিলো।
বাড়ি-ভিটা সহ পৈত্রিকসূত্রে পাপ্ত মাত্র সামান্য কিছু জমি। কোন মতে মাথা গোজার ঠাই হিসেবে মাটির ঘরে তার বসবাস। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে এক সময় কোনোমতে চলতো তার কষ্টের সংসার। বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরতে তিনি এক সময় গাড়ীর চালক পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।
সংসার জীবনে তার রয়েছে এক স্ত্রী, এক ছেলে। পিতার অভাব-অনটনের সংসারে তার লেখাপড়া করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আর তাই জীবন জীবিকার তাগিতে বাধ্য হয়ে পিতার পরামর্শে এই পেশায় জড়িয়ে যান বেলাল। বর্তমানে তিনি এই পেশাকে পবিত্র পেশা হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
ঢাকা, রাজশাহী এবং বগুড়া থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো নওগাঁর এজেন্ট ইয়াছিনের কাছ থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করার পর সে পেপারগুলো বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাঠকদের হাতে টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়ে থাকি।
এরপর উপার্জিত টাকা থেকে এজেন্টকে পত্রিকার বিল দেয়ার পর যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকে তা হচ্ছে আমার একমাত্র আয়। খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত খবর পৌঁছে দেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সঠিক সময় খবরের কাগজ দিয়ে সবাইকে খুশি করে সে। এ কাজে সে আনন্দ পায়। কিন্তু নিজের জীবনের খবরটাই সে অনেক সময় ভুলে যায়।
বলাল জানান, আমি এক গরিব কৃষকের ছেলে। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার। অভাবের সংসারের হাল ধরতে আমি কাজের সন্ধানে নেমে পড়ি। প্রথম কাজ শুরু করি ইট ভাটার গাড়িচালক হিসেবে। আর ইটভাটাতে কাজ হয় ছয় মাস আর ছয় মাস বেকার থাকি। তাই আমার বাবা আমাকে বলে বাবা তুমি পত্রিকার ব্যবসা করো তাহলে তোমাকে আর কাজের সন্ধান করা লাগবে না। তাই আমি ভেবে চিন্তে পত্রিকার ব্যবসা জন্য প্রথমে বদলগাছী থানার সাইদ এর কাছ ১লাখ ১০হাজার টাকা দিয়ে একটি সাইট কিনে নিয়ে পত্রিকার ব্যবসা শুরু করি। চলার জন্য রয়ে ছিলো একটি বাইসাইকেল। দীর্ঘ তিন বছর পরে কিছু টাকা জমিয়ে মোটরসাইকেল ক্রয় করি। ব্যবসা ভাল চলতে থাকলে সংসারের খরচ বাদে জমানো টাকা দিয়ে আমি বদলগাছীতে আরো দুইটি সাইট ক্রয় করি এক লাখ টাকায়। পত্রিকা বিক্রয় ও বিলি করার জন্য বদলগাছীর সজল নামের এক জনকে আমার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করেছি। এখন আমার মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা আয় হয়।
প্রত্রিকা বিক্রয় করে বর্তমানে পরিবার নিয়ে বেশ ভালো ভাবে জীবন যাপন করছে বেলাল।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, বেলাল খুব ভালো ও কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। আমি তাহার ব্যবসার সফলতা কমানা করছি।