ধূমকেতু প্রতিবেদক, নন্দীগ্রাম : বগুড়ার নন্দীগ্রামে কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি যোগদান করেন আদনান বাবু। তিনি যোগদানের পর থেকেই নন্দীগ্রামের কৃষি ও কৃষকের টেকসই উন্নয়নের জন্য সাধারণ কৃষি সেবার পাশাপাশি চালু করেছেন বিশেষ কৃষি সেবা। তিনি উদ্ভাবন করেছেন প্ল্যান্টডক্টর মোবাইলটিম, ছাদ কৃষি লার্নিং সেন্টার, ফারমার্স আইটি স্কুল, কৃষকের গল্প শিরোনামে অনলাইন ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ। তার এ সকল উদ্ভাবনীগুলো নন্দীগ্রামের কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে।
তার উদ্ভাবনী প্ল্যান্টডক্টর মোবাইলটিমের মাধ্যমে সপ্তাহের নির্র্দিষ্ট দিনে ভ্রাম্যমাণ কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কৃষকদের জমায়েত বেশী হয় এমন জায়গাতে যেমন ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত¡র, হাট-বাজার, রাস্তার মোড়ে মোবাইলটিমের মাধ্যমে কৃষি সেবা প্রদান করা হয়। এই মোবাইলটিমের মাধ্যমে ফসলের রোগবালাই দমন, পোকামাকড়ের প্রেসস্ক্রিপশন, আধুনিক কৃষি প্রযু্িক্তর ব্যবহার, জাত সম্প্রসারণ, কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কে সচেতন, নিরাপদ ও জৈব কৃষি উপকরণ প্রদর্শন, কৃষি উদ্যোক্তা গঠন, কৃষি লিফলেট বিতরণসহ আধুনিক ও রপ্তানী মূখী কৃষি গড়ে তোলার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়। এই মোবাইলটিমে নিয়মিত যুক্ত আছেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব ভট্টাচার্য্য, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও কৃষি বিশেষজ্ঞগণ। কৃষকদের নিয়ে দিনব্যাপী এ সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী ঘোষনা প্রতি ইঞ্চি জায়গা আবাদের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সকলকে উৎসাহিত করার জন্য এবং ছাদ কৃষিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে ছাদ কৃষি লার্নিং সেন্টার। এখানে বিভিন্ন ধরনের দেশী-বিদেশী ফল, ফুল, সবজি ও শোভা বর্ধনকারী গাছ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছের সাথে বাংলা নাম, ইংরেজি নাম এবং বিশেষ গুনাগুণ ও বৈশিষ্ট্যসহ নেমপ্লেট লাগানো রয়েছে। সেখানে একজন কৃষক ও দর্শনার্থী একা একা ঘুরে ঘুরে নানা কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানছে এবং শিখছেন।
ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি সেবা কার্যক্রমকে আরো সহজীকরণ করতে গঠন করা হয়েছে ফারমার্স আইটি স্কুল। এতে একদিকে কৃষি সেবা পেতে সময় এবং শ্রম কম লাগছে অপরদিকে সেবাগ্রহীদের ভোগান্তিও কম হচ্ছে। প্রতি মাসের ১ম কর্ম দিবসে তত্বীয় এবং ব্যবহারিক সেশনের মাধ্যমে স্কুলটি পরিচালনা করা হয়। নির্ধারিত দিনে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই স্কুলে কৃষিভিত্তিক আইটি প্রযুক্তির উপর সেশন পরিচালনা করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। কৃষকসহ যে কোন কৃষি অনুরাগীই এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। তবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রথমে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে একজন করে তরুণ আগ্রহী এবং উদ্যোমী শিক্ষিত কৃষককে ছাত্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
![](https://dhumkatunews.com/wp-content/uploads/2022/03/Nandigram-1-4.jpg)
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কৃষি ও কৃষকদের অনলাইন ভিত্তিক কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে কৃষকের গল্প শিরো নামে ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ। এখানে বিভিন্ন সফল কৃষকের সফলতার গল্পের ভিডিও ডকুমেন্টারি, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, সমসাময়িক কৃষি, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ নানা কৃষি বিষয়ক আলোচনা করা হয়। এই দুটি মাধ্যমে প্রায় ২০,০০০ কৃষক এবং কৃষি অনুরাগী যুক্ত আছেন।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু বলেন, কৃষি সেবাকে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য এবং কৃষি সেবা প্রাপ্তি আরও সহজীকরন করার ক্ষেত্রে এ সকল উদ্ভাবনী কৃষি সেবা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে। আশা করি এই সেবাগুলো পেয়ে নন্দীগ্রামের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে।