ধূমকেতু প্রতিবেদক, বদলগাছী : হিউম্যান মেডিকেল সার্ভিসের ন্যায় প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি মেডিকেল সার্ভিসও জরুরী সেবারই অন্তর্ভুক্ত। যদিও এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরী সেবা হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রত্যেকটি পশু-পাখি ও পোষা প্রাণী যে কোন সময় অসুস্থ হতে পারে, তাঁর জন্য জরুরী চিকিৎসা-অপারেশনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন হতে পারে। ফলে প্রাণীকুলের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ নাজমুল হক তার নিজ উদ্যোগে দেশে প্রথম বারের মতো উপজেলা পর্যায়ে জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ স্থাপন করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ চত্বরে এই সেবা দানের ডেস্ক তৈরি করা হয়েছে। ব্যতিক্রম এমন উদ্যোগে পুরো উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চিকিৎসাসেবা পেয়ে উপজেলার কৃষক ও খামারিরা উপকৃত হচ্ছে। শুধু এ উপজেলায় নয়, সারাদেশে এমন সেবার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদের কার্যালয়ের প্রবেশে সিঁড়ির ডান পাশে স্থাপন করছেন ‘জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ’ ডেস্ক। যেখানে সার্বক্ষণিক প্রাণীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও আছে। সেখানে জরুরী সেবোর ডেস্কেও ব্যানারে হট লাইন নং সহ পাঁচজনের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। এই ৫ জনের মেডিকেল টিমের মাধ্যমে যে কোন ছুটির দিন, অফিস টাইমের আগে, পরে ও গভীররাতে জরুরী প্রয়োজনে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ অফিসের ঐ চার জনের মধ্যে যে কোন কাউকে ফোন করে পরামর্শ ও সেবা নেওয়া যাবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যে কোন সেবাগ্রহীতা জরুরী সেবার জন্য ছুটির দিনও এসে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করলেই কেউ না কেউ এসে জরুরী সেবা ডেস্কে বসে সেবা প্রদান করছে। এই প্রাণিসম্পদ দপ্তরে রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাম চেম্বার। এছাড়া আছে নমুনা সংগ্রহের চেম্বার, অপারেশন থিয়েটার ও ময়নাতদন্তকর্নার, প্রাণী শেড ও গাড়ি পার্কিং সেড।
![](https://dhumkatunews.com/wp-content/uploads/2023/04/bodolgachi-2.jpg)
এছাড়াও অফিসের দেওয়ালে প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সতর্কতামূলক বিভিন্ন ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। সুসজ্জিত করে সাজানো হয়েছে অফিস ও চত্বর।
গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার ও রোববার গিয়ে দেখাযায়, এ সময় ‘ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগ’ ডেস্কের সামনে কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন পরামর্শ নেওয়ার জন্য। ডেস্কে বসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ নাজমুল হক তাদের কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন। এছাড়া যারা অসুস্থ পশু নিয়ে এসেছিলেন তাদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাপত্রও লিখে দেন। তার এমন এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ও সেবায় উপকৃত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
বদলগাছী সদরের হাসান আলী বলেন, গরুর বাচ্চার বয়স কয়েক মাস। কিছুদিন আগে তার এক পা ভেঙে গেছে। বাইরে পশু ডাক্তারকে দেখিয়ে কোনো উপকার হয়নি। উল্টো ভেঙে যাওয়া স্থানে ক্ষত হয়ে পচন ধরেছে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ডাক্তারের পরামর্শে এখানে এসেছি। তিনি দেখার পর পরামর্শ দিলেন পা কেটে ফেলতে হবে।
সদরের জিধিরপুরের বাসিন্দা সুমুন বলেন, গরুর বাচ্চার জ্বর হয়েছে। পরে উপজেলা প্রণিসম্পদে নিয়ে এলাম। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষুধও দিয়েছে। এতে কিছুটা টাকা সাশ্রয় হয়েছে। চিকিৎসাসেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছি।
উপজেলার আরেক বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, গত শুক্রবার আমার ছাগল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানকার ডাক্তরেরা আমার ছাগলের চিকিৎসাদেন ও ফ্রি ঔষুধ দেন। ছুটির দিনে তাদের চিকিৎসাসেবা পেয়ে আমি খুব খুশি।
স্বেচ্ছাসেবক আলামিন বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। যদি খুবই গুরুত্বর হয় যে উপজেলায় নিয়ে আসা সম্ভব না সেক্ষেত্রে বাড়ি গিয়েও বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেবার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে ফ্রি ঔষুধও দেওয়া হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ নাজমুল হক বলেন, শুধু জরুরী সেবা সহজীকরণে ভেটেরিনারি মেডিকেল বিভাগই নয়। অত্র দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালকে বাংলাদেশে একটি মডেল প্রাণিসম্পদ কমপ্লেক্স হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
![](https://dhumkatunews.com/wp-content/uploads/2023/04/bodolgachi2.jpg)
জরুরী ভেটেরিনারি বিভাগে হটলাইন নম্বরসহ মেডিকেল টিমের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যে কোন সময় জরুরী প্রয়োজনে সেবা গ্রহীতা ফোন দিলে টিমের যে কেউ এসে ডেস্কে বসে জরুরী সেবা দিতে পারবে। মডেল প্রণিসম্পদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ সেবাকে যদি সহজীকরণ করা যায়, সমাজে কোয়ালিটি সার্ভিস এবং প্রাণিসম্পদ সুশাসন যদি প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে উপজেলাবাসী উপকৃত হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়িত হবে। এমন উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ছুটির মধ্যে বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এবং ডেস্কে বসে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রাণিসম্পদ অত্যন্ত সমৃদ্ধ খাত। দুধ, ডিম ও মাংসের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ হয়। আমার বিশ্বাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি সারাদেশে এমন উদ্যোগ নেবে।